আল-আসমাউল হুসনা আরবি শব্দ। আল-আসমা শব্দের অর্থ নামসমূহ। আর হুসনা অর্থ সুন্দরতম। অতএব, আল-আসমাউল হুসনা অর্থ সুন্দরতম নামসমূহ। আল্লাহ তায়ালার সুন্দর সুন্দর নামকে একত্রে আল-আসমাউল হুসনা বলা হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন-
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا
অর্থ: "আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব, তোমরা তাকে সেই সব নামেই ডাকবে।” (সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ১৮০)
আল্লাহ তায়ালা সকল গুণের আধার। যেমন: তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা, ক্ষমাশীল, দয়াবান, ধৈর্যশীল, সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান, প্রতিপালক ইত্যাদি। এমন কোনো গুণ নেই যা তার মধ্যে নেই। এসব গুণের প্রত্যেকটির পৃথক পৃথক নাম রয়েছে। এগুলো হলো গুণবাচক নাম। গুণবাচক এসব নামই আল-আসমাউল হুসনা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাকের অনেক গুণবাচক নামের উল্লেখ আছে। আমরা আল্লাহ পাকের ৯৯টি (নিরানব্বইটি) গুণবাচক নামের কথা জানি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, মহান আল্লাহর গুণবাচক নামের কোনো শেষ নেই। এগুলো অসংখ্য। তবে বেশি উল্লেখযোগ্য হলো এ নিরানব্বইটি নাম।
এসব নাম আল্লাহ তায়ালার পরিচয় প্রকাশ করে। যেমন: আল্লাহু খালিক। খালিক অর্থ সৃষ্টিকর্তা বা স্রষ্টা। সুতরাং আমরা এ নাম দ্বারা বুঝতে পারি যে, এ বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা হলেন মহান আল্লাহ। এভাবে গুণবাচক নামসমূহ দ্বারা আমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভালোভাবে চিনতে পারি। ফলে তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা সহজ হয়। আল্লাহ তায়ালার এসব গুণ আমরা অনুশীলন করব। এতে আমাদের চরিত্র সুন্দর হবে। সকলেই আমাদের ভালোবাসবে। আল্লাহ তায়ালাও আমাদের ভালোবাসবেন।
আল্লাহু মালিক ( اللَّهُ مَالِكٌ )
আল্লাহ তায়ালা সকল কিছুর মালিক। মালিক অর্থ অধিকারী। তিনি আসমান জমিন, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, পাহাড়, পর্বত, গাছপালা, নদী, সাগর সবকিছুর অধিপতি। সকল কিছুই তার নির্দেশে পরিচালিত হয়। কোনো কিছুই তার আদেশ লঙ্ঘন করে না। পশুপাখি, কীটপতঙ্গের মালিকও তিনিই। পৃথিবীতে বড়ো-ছোটো সকল বস্তুই তার মালিকানার অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তায়ালা মানুষেরও মালিক। আমাদের জীবন-মৃত্যু তারই নিয়ন্ত্রণে। আমাদের ধনসম্পদ, সোনারুপা সবকিছুর প্রকৃত মালিকও তিনিই। পৃথিবীতে আমরা তার প্রতিনিধি। এ হিসেবে আমরা ধনসম্পদের আমানতদার মাত্র। আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত ও পরকালের মালিক। জান্নাত-জাহান্নাম তারই অধিকারে। শেষ বিচারের দিনের মালিকও তিনিই। এক কথায় বিশ্বজগতে যা কিছু আছে সবকিছুরই মালিক হলেন মহান আল্লাহ।
আল্লাহ্র কারিম (اللهُ كَرِيمٌ )
কারিম আরবি শব্দ। এর অর্থ দয়াময়, মহানুভব, উদার ইত্যাদি। আল্লাহ তায়ালা অতীব মহান, করুণাময়। উদারতা, দয়া, মায়া, স্নেহ, সহনশীলতা, ঔদার্য, ক্ষমা ইত্যাদি গুণাবলি পরিপূর্ণভাবে তার সত্তায় বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ অসীম তাই তার মায়া, ক্ষমা, সহনশীলতা ইত্যাদি সীমাহীন। আমাদের কেউ কাউকে দয়া দেখালে, ক্ষমা করলে, আমরা ঐ ব্যক্তিকে কতইনা মহান ভাবি। আদর্শবান ব্যক্তি হিসেবে তার গুণগান করি। কিন্তু মহান আল্লাহ যে কত বড় দয়াময়, উদার, ক্ষমাশীল তা আমরা অনুমানও করতে পারি না। কেননা তিনি তো মহামহিম অসীম সত্তার অধিকারী। তিনি সকল সৃষ্টির প্রতিই উদার ও মহানুভব। আলো, বাতাস, পানি, চন্দ্র, সূর্য, জীবজন্তু, পাহাড়, নদী, আসমান জমিন সবই আল্লাহর নিয়ামত। বিনিময় প্রত্যাশা ছাড়া উদারভাবে অকাতরে তিনি সকলের প্রতি নিয়ামত বিতরণ করেন। তার মহানুভবতার কোনো সীমা নেই। তার এ অসীম এবং অফুরন্ত দয়া, মায়া ও উদারতার জন্য সকলকে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত, শোকর আদায় করা উচিত।
মহান আল্লাহর গুণবাচক নামের অনুসরণে আমরাও অন্যের প্রতি উদার ও দয়াপূর্ণ আচরণ করব। কথায়, কাজে বাস্তব জীবনে মহানুভব হবো।
আল্লাহ্ আলিম ( اللَّهُ عَلِيمٌ )
আলিম আরবি শব্দ। এর অর্থ সর্বজ্ঞ অর্থাৎ যিনি সবকিছু জানেন বা যিনি সকল জ্ঞানের অধিকারী। আল্লাহ তায়ালা হলেন আলিম। তিনি সকল জ্ঞানের আধার, তার জ্ঞান অসীম। তার জ্ঞানের পরিমাপ করা যায় না। কোনো কিছুই তার জ্ঞানের বাইরে নয়। তিনি আসমান জমিনের সবকিছুর খবরই জানেন। আমাদের সকল কথাবার্তা, কাজকর্ম তিনি জানেন। এমনকি আমরা অন্তরে যা চিন্তা করি তিনি সেগুলোও জানেন। আমরা যা কল্পনা করি বা স্বপ্ন দেখি সেগুলোও তার জানার বাইরে নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন-
وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ
অর্থ: " অন্তরে যা আছে আল্লাহ সে সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত।" (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৫৪)
আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান সীমাহীন। তার জ্ঞানকে কেউই ফাঁকি দিতে পারে না। ক্ষুদ্র পিপীলিকার সমস্ত খবরও তার জানা। সমুদ্রের তলদেশে কিংবা মহাশূন্যে কোথায় কী হচ্ছে সবই তিনি জানেন। মোটকথা সবই তার জ্ঞানের আওতাধীন। সুতরাং আমরা সবসময় এ কথা মনে রাখব। আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন এমন কোনো কাজ করব না।
আল্লাহ্ হাকিম ( اللهُ حَكِيمٌ )
হাকিম আরবি শব্দ। এর অর্থ প্রজ্ঞাময়, হিকমতের অধিকারী, সুবিজ্ঞ, সুনিপুণ কর্মদক্ষ। মহান আল্লাহর গুণবাচক নাম হিসেবে হাকিম অর্থ আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়, সুদক্ষ, সুনিপুণ ও হিকমতের মালিক। এই মহাবিশ্ব তিনি যেমন সর্বোত্তম দক্ষতার সাথে সৃজন করেছেন, তেমন মহা প্রজ্ঞা, সুনিপুণ ও সুদক্ষ কৌশলের সাথে আবহমানকাল থেকে পরিচালনা করছেন। আকাশের তারকারাজি, চন্দ্র, সূর্য, মেঘমালা, নদনদী, আলো, বাতাস, আগুন, পানি, ফুল, ফল, বৃক্ষ-লতা, আসমান-জমিন, জীবনমরণ, স্বাদ-গন্ধ ও রূপ-রস যে দিকেই আমরা তাকাই সর্বত্রই এক সুন্দর সুনিপুণ কৌশল দেখতে পাই। তাইতো মহান আল্লাহ বলেন,
"যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সপ্তাকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাবে না; তুমি আবার তাকিয়ে দেখো, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি?" (সূরা আল-মুল্ক, আয়াত: ৩)
মহান আল্লাহর মহা প্রজ্ঞার নিদর্শন দেখে আমরা তার প্রতি সুদৃঢ় ইমান আনব, শ্রদ্ধায় বিনম্রভাবে তাকে স্মরণ করব। সমগ্র সৃষ্টিকুলের মধ্যে যে প্রজ্ঞা ও হিকমত বিদ্যমান তা উপলব্ধি করে নিজেরা চিন্তাশীল হবো। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চায় উৎসাহী হবো। খাঁটি ইমানদার হওয়ার পাশাপাশি অনুসন্ধিৎসু বিজ্ঞানমনস্ক হবো। আমাদের লেখাপড়া ও দৈনন্দিন কাজকর্ম গুছিয়ে সুশৃঙ্খল-সুনিপুণভাবে সময়ানুবর্তী হয়ে সমাপন করতে চেষ্টা করব। তাতে আমাদের জীবন সার্থক ও সফল হবে।
| কাজ : শিক্ষার্থীরা আল্লাহর চারটি গুণবাচক নাম উল্লেখ করে প্রত্যেকটির একটি করে শিক্ষা লিখে শ্রেণি শিক্ষককে দেখাবে। | 
Read more